স্যানিটাইজার ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হল সাংবাদিককে

বৃতি সুন্দর রায় ও গৌরাঙ্গ সাধুঃ গ্রাম প্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তার জেরেই চরম শাস্তি পেতে হল সাংবাদিককে। স্যানিটাইজার ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ বছরের সাংবাদিক ও তাঁর এক বন্ধুর। ঘটনা লখনৌয়ের বলরামপুর জেলার। তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে একজন গ্রাম প্রধানের ছেলে।

নিহত সাংবাদিক রাকেশ সিং নির্ভীক

পুলিশ জানিয়েছে, বলরামপুরের কালওয়ারি গ্রামের কাছ থেকে সাংবাদিক রাকেশ সিং নির্ভীক ও তাঁর সহকর্মী বন্ধু পিন্টু শাহুর ঝলসানাে দেহ উদ্ধার হয় গত সপ্তাহে। পিন্টুর শরীরে প্রাণ ছিল না। তবে বেঁছে ছিলেন নির্ভীক। তাঁকে লখনৌয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ঘণ্টাখানেক পরে মৃত্যু হয় তাঁর। কালওয়ারি গ্রামেরই বাসিন্দা নির্ভীক। রাষ্ট্রীয় স্বরূপ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শরীরের অর্ধেকের বেশিই পুড়ে গিয়েছিল তাঁর। মৃত্যুর আগে গ্রাম প্রধানের বিরুদ্ধে বয়ান দিয়ে যান সাংবাদিক। তাঁর অভিযােগ ছিল , নিয়মিত খবরের কাগজে ওই গ্রাম প্রধান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে লেখালিখি করতেন তিনি। অনেক দুর্নীতির খবর ফাঁস করে দিয়েছিলেন। তাই তাদের খুন করার চেষ্টা করেছে গ্রাম প্রধানের লোকজনই।

দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি ফোন পাচ্ছিলেন সাংবাদিক। পরিবার জানিয়েছে, তাঁকে লেখালিখি বন্ধ করার জন্য চাপও দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি শােনেননি। বলরামপুরের পুলিশ প্রধান দেব রঞ্জন বর্মা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বরূপ পত্রিকায় গ্রাম প্রধান ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত কলম লিখতেন রাকেশ সিং নির্ভীক। সে কারণেই তাঁর শত্রু বাড়ছিল গ্রামে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার দিন নির্ভীক ও তাঁর সহকর্মী পিন্টুকে নিজেদের ডেরায় ডেকে পাঠায় গ্রাম প্রধান। তারপরেই গায়ে স্যানিটাইজার ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গ্রাম প্রধানের নাম আক্রম। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযােগ আছে গ্রামবাসীর।

তাই হয়তো আজ, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সাথে সাধারণ মানুষদের কথা তুলে ধরার জন্য, প্রতিবাদী সাংবাদিকদের পুরস্কার পেতে হচ্ছে “কয়েক লিটার স্যানিটাইজারে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের লেলিহান শিখা”

অপরাধের তালিকা নাকি দীর্ঘ, যদিও কোনও প্রামাণ্য তথ্য এখনও হাতে আসেনি। আক্রমের ছেলে রিঙ্কু মিশ্রকে সংবাদিক হত্যার অভিযােগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরাধের খাতায় আগে থেকেই নাম আছে রিঙ্কুর। গ্রামে নানা দুর্নীতিমূলক কাজের সঙ্গে সে জড়িত। ধৃত আরও দু’জনের মধ্যে। একজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযােগ আছে। তৃতীয় জন ললিত মিশ্র, গ্রাম প্রধানেরই বন্ধু।

জেরায় ধৃতরা দাবি করেছে, এটা নিছকই দুর্ঘটনা। খুনের চেষ্টা করা হয়নি। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, বয়ানে অনেক অসঙ্গতি আছে। বারে বারেই বয়ান বদলে ফেলছে অভিযুক্তরা। পুলিশের দাবি, এই খুনের কারণ দুটো হতে পারে। প্রথমত, দুর্নীতির খবর সামনে এনেছিলেন সাংবাদিক। দ্বিতীয়ত, টাকাপয়সার লেনদেন নিয়ে কোনও সমস্যা হয়েছিল। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও ১৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। দরকার হলে গ্রামের সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

করোনা মহামারীর রক্ষা কবচ ‘স্যানিটাইজার’ দিয়ে জনগণকে রক্ষার বদলে, প্রতিবাদী ও সাহসী সাংবাদিকদের খুন করার নিকৃষ্টতম ঘটনাকে গোটা ভারতবর্ষে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এবং এইভাবে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধের নির্ভুল প্রচেষ্টাকে প্রতিবাদ জানাচ্ছে সাংবাদিক মহল। এইভাবে একের পরে এক সাংবাদিকদের দমন-পীড়নের জন্য ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হতে থাকলে, এরপর এমন একটা দিন আসবে যখন সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলার জন্য কেউ থাকবে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য কেউ থাকবে না। কারণ, একমাত্র সাংবাদিকরাই পারে নিজের জীবনকে বাজি রেখে, নির্ভয়ে সাধারণমানুষের না’বলতে পারা কথা সর্বসমক্ষে তুলে ধরতে।

Related posts

Leave a Comment