
গৌরাঙ্গ সাধুঃ পেশাদারি সৌজন্য যখন বিপন্ন মানুষকে রক্ষা করে, তখন তাকে প্রকাশ্যে আনা ছাড়া উপায় থাকে না।তাই নিতান্ত বাধ্য হয়েই এমন প্রতিবেদন লিখছি। মানুষের সাহায্যে পুলিশের জোয়াল কাঁধে তুলে নেওয়ার ইতিবৃত্ত।

গতকাল সংবাদ সংগ্রহ করে বহরমপুর ষ্টেশন থেকে কল্যানী আসার জন্য শিয়ালদহ – লালগোলা ট্রেনে উঠি দুপুর ৩ টে নাগাদ। জানালার পাশে বসার জায়গা পেয়ে যাই।ট্রেনটি বেলডাঙা ষ্টেশনে ঢুকতেই আমার পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠে। তারাহুরো করে পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি বের করতে গিয়ে ফোনটি সিটের ফাঁকা দিয়ে জানালার পাশে ট্রেনে লোহার সিডের ফুটোতে পরে যায়। মোবাইল ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। তাই ফোনটি খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিজে বহু চেষ্টা করেও ওই ফুটো থেকে ফোন তুলতে পারিনি। সহযাত্রীরাও আপ্রান চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

শেষমেশ নিরুপায় হয়ে সহকর্মী সাংবাদিক অঞ্জলি সাধু পশ্চিমবঙ্গ রেল পুলিশের (জিআরপি) শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিএসপি রানাঘাট শঙ্কর ঘোড়াইকে ফোনে আমাদের অসহায়তার জানায়। ডিএসপি শঙ্কর ঘোড়াই অতি তৎপরতার সঙ্গে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে আসে কৃষ্ণনগর ষ্টেশনে। ট্রেনটি কৃষ্ণনগরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওই কামরায় উঠে বহু চেষ্টা করে মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য। কিন্তু ট্রেন মাত্র ১০ মিনিট দাঁড়ানোর কারনে ফোনটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।

ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর ঘটনার কথা জানানো হয় শিয়ালদহ রেলওয়ে ষ্টেশন থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ নাসিম আখতারকে। শিয়ালদহে লালগোলা পৌঁছানোর পর শিয়ালদহ রেল থানার আইসির নির্দেশ সাব ইন্সপেক্টর জ্যোতির্ময় সরকার, উজ্জ্বল রায় ও তপন সাহা ট্রেনের ওই কামরায় মোবাইল ফোনটি উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পরে। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে ঘন্টা খানেকের প্রচেষ্টায় সাফল্য মেলে।যখন ফোন উদ্ধার হয় তখন রাত প্রায় ৯টা। উদ্ধারকার্যে হাত লাগানো তিন পুলিশ অফিসারের হাত রক্তাক্ত।

কারন ট্রেনের জানালার পাশে থাকা লোহার সিডের গুঁতোয়। আমার মুখে হাসি ফোটাতে যারা ঘাম ঝরালো, সেই পুলিশ কর্মীদের মুখেও সাফল্যের হাসি।

আমি নিশ্চিত পুলিশ এমন কাজ প্রায়শই করেন।কেউ তাঁদের ওই ভালো কাজের প্রশংসা করে না বলেই হয়তো পুলিশ সহ নাগরিকদের অসুবিধেটুকু টের পায় না।এ প্রতিবেদন নেহাতই অত্যুক্তি মনে হলে আমাদের অসহনীয় যন্ত্রনার কথা বোঝার চেষ্টা করবেন আশাকরি।
