দামি নেতাও দিল না ফুল
ধৃতরাষ্ট্র দত্তঃ ক্ষমতার দম্ভে সহকর্মীকে এভাবেও ভুলে যাওয়া যায়❓সরকারি দল করলেই কি সকলের মাথা কিনে নিজে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ❓সরকারি দলের নেতা হলেই কি অবলীলায় দুধে-ভাতে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে❓পানিহাটির আজাদ হিন্দ নগরের বাসিন্দা এক আদর্শবান তৃনমূল কর্মীর অকাল মৃত্যুতে ওই প্রশ্নগুলো প্রতিধ্বনি হয়ে ঘুরছে নীতি পরায়ন রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে।

যখন সরকারি দলের একদল ধান্দাবাজ নেতাদের ফুলে ফেঁপে ওঠার ঘটনায় সমাজের চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসে। রাজনীতি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সর্বত্র শুধু ভয় আর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তখন ওই আদর্শবান তৃনমূল কর্মী তপন চক্রবর্তী মরে প্রমান করে গেলেন, বিপন্ন সময়ে রাজনীতিতে যে অন্ধকার আতঙ্ক,তা সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। আশঙ্কার কালো মেঘ যেন মাথার ওপর থেকে অনেকটাই সরিয়ে দিলেন মৃত তৃনমূল কর্মী তপন চক্রবর্তী। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকতে দলের নাম ভাঙিয়ে মানুষ ঠকাতে হয়নি কখনও তাঁকে। সৎভাবে বেঁচে থাকতে কখনও বাজারে চাল, আবার কখনও মুরগির মাংস, মৃত্যুর আগে পানিহাটি হাসপাতালের পিছনের বাজারে মাছ বিক্রি করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। রাজনীতির চারপাশটা যখন ঘন অন্ধকার।সেই অন্ধকার সরিয়ে রাজনীতিতে একটুখানি আলোর দিশা দেওয়াই কি তপন চক্রবর্তীদের মত সৎ রাজনৈতিক কর্মীদের অপরাধ❓
ধান্দাবাজ নেতাদের পদলেহন না করাই কি তপন চক্রবর্তীদের মত আদর্শবান রাজনৈতিক কর্মীদের অপরাধ❓
তাই কি এমন উজ্জ্বল রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যুর পরেও তার বুকের উপর দেখা গেলনা তৃনমূলের দলীয় পতাকা❓
তাই কি পানিহাটির নামি দামি তৃনমূল নেতাদের হাত থেকেও পুস্প মাল্য জুটল না মৃত তপন চক্রবর্তীর নিথর দেহে❓
যে কোনও আদর্শবান রাজনৈতিক কর্মীর জীবনের শেষ ইচ্ছা থাকে, অন্তত তাঁর মৃত্যুর পরে দলীয় পতাকা তাঁর বুকে জড়িয়ে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করবে তাঁর দলের নেতা কর্মীরা। তপন চক্রবর্তীও হয়তো তাই চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে তা হলনা। কিন্তু কেন❓কি তাঁর অপরাধ❓সবই অজানা রয়ে গেল একসময়ের কংগ্রেস অধুনা তৃনমূল কংগ্রেসের লড়াকু সৈনিক তপন চক্রবর্তীর।

কে এই তপন চক্রবর্তী❓❓
সাংবাদিকতার সূত্রে খুব সম্ভবত ১৯৯১ সালে তপন চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় তৎকালীন সময়ে পানিহাটির একমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলের মুখ নির্মল ঘোষের গদিতে। মনখোলা, সাদাকে সাদা বলা, হার-না-মানা, একরোখা একজন যুবক হিসেবেই চিনেছি তাঁকে। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অনেকবার দেখা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। সেই সময়ে যখন আজাদ হিন্দ নগরের বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা মুষড়ে পড়েছে, তখনই কাঁধে পেয়েছে তপনের ভরসা জোগানো হাত। সব সময়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, নতুন লড়াইয়ের দিকে হাঁটার কথা বলেছে। আমি সাংবাদিকতার কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও যোগাযোগ ছিল বেশ কিছু বছর। অন্যান্য অনেক কাজ নিয়ে, ভাবনাচিন্তা নিয়ে আদানপ্রদান হয়েছে। শেষ কয়েক বছরে এই যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে এলেও, আমি সবসময় জেনেছি, তপন নিশ্চয়ই তাঁর বিশ্বাসের পথে এগোচ্ছে, অকুতোভয়, টানটান। সেই তপন চক্রবর্তীর গুরুতর অসুস্থতার কথাও জানলাম এই ফেসবুকেই। টগবগে মানুষটা শয্যাশায়ী, এ-কথাই বরং বিশ্বাস হতে চায় না। কারা আছেন ওঁর পাশে, জানি না। আছেন নিশ্চয়ই বন্ধুরা। জানলাম, ৬ মে তপনের মৃত্যুর খবর ফেসবুকেই।

এই দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে তপনের খোঁজ নিতে গেলাম ওর রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে। শুনলাম ওর বঞ্চনা বৈষম্যের ইতিবৃত্ত। শুনে খুব মন খারাপ হল। আমার সামর্থ্য হয়তো সীমিত। তপনের মত ঋজু ভাবনার, স্পষ্ট চিন্তাধারার মানুষের বড় দরকার ছিল আজকের সমাজে।পানিহাটি হাসপাতালের পিছনের বাজারে আমার সঙ্গে দেখা হলেই পরিষ্কার হেসে উঠে বলত, ‘তারপর, তিতুমীর পত্রিকা আছে?’ মনে পড়ল তপনের সে কথা।আর বসে থাকতে পারলাম না। আদর্শবান তৃনমূল কর্মী তপন চক্রবর্তীর বঞ্চনা বৈষম্যের ইতিবৃত্ত লিখতে বসে পড়লাম। লেখা শেষ। কিন্তু এ কি আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে কেন❓
প্রতিটি সৎ নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মীর জীবনের সঙ্গেই বোধহয় এমন হয়।

কিন্তু কেন এমনটা হয়❓❓কেন এমন অবহেলা❓❓কেন এমন অপচ্ছেদ্দা❓❓কে দেবে এর জবাব❓❓তপন চক্রবর্তীর মত আদর্শবান রাজনৈতিক কর্মীর জীবন-মৃত্যুর সংগ্রামের কথা, অন্য সৎ রাজনৈতিক কর্মীদেরও কি জানা উচিত নয়❓❓❓
