ধৃতরাষ্ট্র দত্তঃ বঞ্চনা আর বৈষম্যে ভরা শিল্পী জীবন। অথচ তাঁর সঙ্গীত সংগ্রহের তালিকা দেখে চমকে উঠতে হয়। শিল্পীর সংগ্রহে, মেলা গানের তালিকা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। তাঁর কন্ঠে একের পর এক গান শুনে বিস্মিত হতে হয়। কোনও সঙ্গীত শিল্পীর কাছে সঙ্গীত শিক্ষার পাঠ নেয়নি কখনও। ৪২ বছর ধরে নিঃশব্দে রেডিয়োর সঙ্গীত শুনে শুনেই অনেক রকমের গানের তালিম নিয়েছেন সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জি।

এই শ্রবণসংস্কৃতির ভান্ভারি সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জির সঙ্গীত শিল্পী জীবন বঞ্চনা আর বৈষম্যে ভরা। সঙ্গীত চর্চার মূল শ্রোত থেকে একেবারে ছিটকে যাওয়া সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জি আজও তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পাননি। শিল্পী জীবনে প্রতিষ্ঠা পাবেন, এমন সময়ে পূর্ণচ্ছেদ টেনে দিয়েছিল তাঁর বাবার মৃত্যু। সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জির জীবনটাই সংঘর্ষে ঘেরা। একুশে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তিরিশ পেরনোর আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ।মাথার ওপর একমাত্র পুত্র সন্তানকে বড় করার গুরুদায়িত্ব। অথচ হাতে পুঁজি সামান্য। তবু ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার তাগিদে সমস্ত গয়না বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

ছেলেকে বড় করতে, লেখাপড়া শেখাতে জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জি। ছেলে মায়ের মুখ রেখেছে।শিল্পী স্বাতী মুখার্জি সাধারণ হিসেবের বাইরে এক জন মহীয়সী। মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করতে বিপ্লবী বীর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর তৈরি ফরওয়ার্ড ব্লকের আজীবন সদস্য সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জি এখনও মানবমঙ্গলে পথে নামেন।
শিল্পী স্বাতী মুখার্জি সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে বাড়িতেই মেতে ওঠেন সঙ্গীত চর্চায়।
টালির চালের নীচে হাঁড়ি কড়াই উনুন ঘুঁটে কয়লা ঝুলকালির সংসারে নয়, সংস্কৃতি পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠেন শিল্পী স্বাতী মুখার্জি। হাওড়ার বালি শহরেই কাটে তাঁর বাল্যকাল। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সাচ্চা আদর্শবান নাট্যকার। ছেলেকে নিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করেছেন শিল্পী স্বাতী মুখার্জি। তাঁর স্বামী দেবব্রত মুখার্জি। একজন স্বনামধন্য স্বর্ণপদক প্রাপ্ত অধ্যাপক। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়া নর্থ স্টেশন রোডের একচিলতে ফ্লাটে স্বামী, অকৃতদার ননদ ও ছেলেকে নিয়ে শিল্পী স্বাতী মুখার্জির সুখের সংসার। শিল্পী স্বাতী মুখার্জি অনেক স্বপ্ন দেখেন, অন্ধকারে থাকা অসহায় মানুষের জীবন- যুদ্ধে সামিল হতে চান। অন্ধকারে থাকা, মাটিতে শিকড় আঁকড়ে থাকা মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালাতে সংকল্প করেন।ভারি মিষ্টি মনের মানুষ শিল্পী স্বাতী মুখার্জি।

একজন স্বনামধন্য স্বর্ণপদক প্রাপ্ত অধ্যাপক
অতিমারির গ্রাসে নিঃসন্দেহে আজ বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা। সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জির খালি গলায় সঙ্গীত এখন মানসিক সুস্থতার প্রাকৃতিক ছন্দ হয়ে উঠতে পারে। চার দেওয়ালের বন্দি জীবন স্মার্টফোনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে ওঠা জীবনে সঙ্গীত শিল্পী স্বাতী মুখার্জির ‘হরবোলা’ সঙ্গীত ফিরিয়ে দেবে ধুলো-কাদার অতিশয্যে স্বাভাবিক বিকাশের পথ। শিল্পী স্বাতী মুখার্জির স্বামী প্রাক্তন অধ্যাপক দেবব্রত মুখার্জিও চায় স্ত্রীর প্রতিভার বিকাশ।

শিল্পীর সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই তাঁকে ঠকায়। অনেকে কথা দিয়েও কথা রাখেনি। তিনি বোঝেন, তবুও শিল্পী স্বাতী মুখার্জি থেমে থাকতে রাজি নয়। তাই খোলা আকাশের নীচে শিল্পী স্বাতী মুখার্জি গেয়ে ওঠেন, “পথ হারাবো বলে এবার পথে নেমেছি…”। নিজেকে ‘হরবোলা’ সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করতে এখন শুধু একটু সুযোগের অপেক্ষায় শিল্পী স্বাতী মুখার্জি।।