লালু প্রসাদ যাদবের জামাই পরিচয়ে রেল-পুলিশের চাকরি দেওয়ার নামে কয়েক কোটির প্রতারণা

বৃতি সুন্দর রায়ঃ এ যেন বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা❗

চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা চক্র বললেও কম বলা হবে। চাকরি দেওয়ার নামে রীতিমত ব্যবসা ফেঁদে বসেছে।

কিসের চাকরি চাই❓❓

সব জায়গাতেই চাকরি মিলবে

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ❗ভারতীয় রেল❗

দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট➖➖

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ❕ভারতীয় রেল❕ দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট➖➖➖➖ সব জায়গাতেই চাকরি মিলবে, তবে দিতে হবে মোটা অংকের নাজরানা। তারপরেও ঠকতে হবে।

আরক্ষা ভবন থেকে পুলিশের কনস্টেবল পদের স্থায়ী চাকরির নিয়োগপত্র বাড়িতে পাঠানো হয়, ভারতীয় ডাক মাধ্যমে। প্রতারক দলের পাঠানো ‘পুলিশের নিয়োগপত্র’ ‘ভারতীয় রেলের নিয়োগপত্র’ এবং ‘দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের নিয়োগপত্র’ দেখে রীতিমতো চমকে যেতে হয় বোঝা যাবে না এটা আসল না নকল!

এই চক্রটি প্রথম শ্রেণির ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে, পুলিশের ওয়েবসাইটে চাকরিপ্রার্থীদের নাম তুলে, চাকরি দেওয়ার নামে রীতিমতো ব্যবসা খুলে বসেছে। পুলিশ সব জেনেও নির্বিকার। পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক।

ওয়েবসাইট সহ ইংরেজি সংবাদপত্রে ভুয়ো চাকরির বিজ্ঞাপন

এই প্রতারক দলের পাল্লায় পড়ে বহু পরিবার ধ্বংসের মুখে। এই প্রতারণা চক্রের কিংপিন প্রশান্ত কুমার সিং ওরফে মুন্না, যার বাড়ি বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত, অধুনা ভাটপাড়া থানার, কাঠপুল হলি-চাইল্ড স্কুল এর পাশে।

চাকরি প্রতারণা চক্রের মূল কারিগর
প্রশান্ত কুমার সিং ওরফে মুন্না

আরেক কিংপিন শুভম চ্যাটার্জি ওরফে বাবাই, যার বাড়ি নদীয়া জেলার কল্যাণীতে।

নৈহাটি থানার ইন্সপেক্টর ছদ্মবেশ ধারী বাবাই

আরেক কিংপিন সর্বানন্দ উপাধ্যায়, যার বাড়ি ধনেশ্বরী ভবন হাজিনগর লালকুঠি।

বারাকপুরের ইন্সপেক্টর ছদ্মবেশধারী সর্বানন্দ

চক্রের আরেক কিংপিন গৌতম কুমার সিং, যার বাড়ি নাগার্জুন রোড, 17/2 B-zone দূর্গাপুর, জেলা- বর্ধমান।

আরেক কিংপিন লাল্টু ব্রীজবংশী, যার বাড়ি নাগার্জুন রোড, 17/2 B-zone দূর্গাপুর, জেলা- বর্ধমান।

এই প্রশান্ত কুমার সিং ওরফে মুন্না, যে নিজেকে, নৈহাটি থানার সার্কেল ইন্সপেক্টর হিসেবে বেকার যুবকদের কাছে পরিচয় দিত। শুভম চ্যাটার্জি ওরফে বাবাই নৈহাটি থানার ইন্সপেক্টর পরিচয় দিত, সর্বানন্দ উপাধ্যায় তিনি নিজেকে, ব্যারাকপুর থানার ইন্সপেক্টর হিসেবে পরিচয় দিত। গৌতম কুমার সিং নিজেকে, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এর প্লান্ট’ম্যানেজার এবং বিহারের জেলবন্দি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব এর জামাই পরিচয় দিত।

এই চক্রের মাস্টারমাইন্ডরা মূলত বিহার ও উত্তর প্রদেশ বিভিন্ন জায়গা থেকে, বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসে প্রতারণা করে। পুলিশের চাকরির বিষয় হলে, ব্যারাকপুর লাটবাগান পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে নিয়ে গিয়ে, বেকার যুবকদের শারীরিক মাপজোপ এবং মেডিকেল করা হতো। রেলে যাদের চাকরি দেওয়া হবে, তাদেরকে কাঁচরাপাড়া ওয়ার্কশপে নিয়ে গিয়ে, ঘুরিয়ে দেখানোর পরে, কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে হাসপাতালে চাকরিপ্রার্থীদের শারীরিক মাপজোপ ও মেডিকেল করানো হতো। তারপর নিয়ে যাওয়া হতো সরাসরি ভারতীয় রেলের পশ্চিমবঙ্গের সদর দপ্তর ফেয়ারলিপ্লেসে। সেখানে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হতো চাকরিপ্রার্থীদের।

এমনকি কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপের পাশেই ট্রেনিং দেওয়ার নামে, ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে, তিন মাস স্টাইপেন্ড দেওয়া হত। যাতে প্রতারকচক্রের প্রতি বেকার যুবক-যুবতীদের ভরসা জন্মায়। এভাবেই একের পর এক বেকার যুবক-যুবতীদের ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করা হয়েছে। সর্বশান্ত করেছে এই প্রশান্ত কুমার সিং ও তার দলবল।

বিহারের আদি বাসিন্দা পুরেন্দ্র সিং ও যার অধুনা ঠিকানা হল, খড়দহ থানা এলাকার সোদপুর রাজাবস্তি, বিন্দা সাউ এর ভাড়াবাড়ি। পুরেন্দ্র সিং এই চাকরি প্রতারণা চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে। তার বৃদ্ধা মা অর্থের অভাবে, বিনা চিকিৎসায় ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বর্তমানে তার বাবা রামদেব সিং তিনিও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছে।

এই প্রতারণা চক্রের কিংপিনেরা চাকরিপ্রার্থীদের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করার জন্য, তাদেরকে কখনও না হয় পুলিশ ট্রেনিং ইস্কুল, কখনও কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপ এবং দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এর মধ্যে নিয়ে যেত। স্বাভাবিকভাবেই এই চাকরি প্রতারণা চক্রের সঙ্গে, পুলিশের অসাধু কিছু কর্মী, রেলের কিছু অসাধু কর্মী এবং দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এর কিছু অসাধু কর্মীদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তা না হলে কখনই এইসব সম্ভব হতো না। লাটবাগান এর পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সদরে নিয়ে গিয়ে, ট্রেনিং, মেডিকেল টেস্ট করা দুরূহ হয়ে উঠতো।

ইতিমধ্যেই, এই চাকরি প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে খড়দহ থানায় আরেক প্রতারিত বেকার যুবক সুরেন্দ্র সিং অভিযোগ দায়ের করেছে। যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেও, হাতের কাছে প্রশান্ত কুমার সিং ওরফে মুন্না কে পেয়েও তাকে ধরেনি। উল্টে তাকে জামিনের সুযোগ করে দেয়।

পুলিশের চাকরি প্রতারণা চক্রের দলে আরেক কিংপিন প্রেম সাউ। যার বাড়ি কাঁকিনাড়া। এই প্রেম সাউ পুলিশ লেখা গাড়িতে করে, পুলিশের চাকরি প্রার্থীদের লাটবাগান নিয়ে যেত এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও নিতো। প্রেম সাউ, প্রশান্ত কুমার সিং, সর্বানন্দ উপাধ্যায় এইসব প্রতারকরা দিব্যি বুকের পাটা ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

প্রশান্ত কুমার সিং ওরফে মুন্না বারাকপুর লাটবাগান পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের মাঠে

পুলিশ তাদের টিকিও ছুঁচ্ছে না। কেন ছুঁচ্ছে না❓

এই নিয়ে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে।

চাকরি দেওয়ার এই প্রতারণা চক্রটি, কয়েকশো বেকার যুবকদের থেকে কোটি কোটি টাকা চাকরি দেওয়ার নাম করে আত্মসাৎ করেছে। কেউই চাকরি পায়নি। বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বেকার যুবকদের কাছে, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের জামাই পরিচয় দিয়ে, গৌতম কুমার সিং বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে নিয়ে এসে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকার যুবকদের ফাঁদে ফেলতো।

এই চক্রের ফাঁদে পড়ে, আর যাতে কোনো বেকার যুবকদের প্রতারিত না হতে হয়, সে জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।

সকল পাঠক বন্ধুদের কাছে আবেদন•••••
এই প্রতারণা চক্রের কিংপিনদের চিনে রাখুন। এবং তাদের গ্রেফতারের জন্য, আমাদের প্রতিবেদনটি প্রচুর পরিমাণে শেয়ার করুন। যাতে ভাইরাল হয়ে, পুলিশের টনক নড়ে এবং প্রতারণা চক্রের কিংপিনেরা পুলিশের জালে আসে।।

Related posts

Leave a Comment