এ যুগের বিদ্যাসাগর সমাজসংস্কারক ইমানুল হক শিক্ষার আলো জ্বালছেন খালপাড় বস্তিতে

ধৃতরাষ্ট্র দত্তঃ পরাধীন ভারতে শিক্ষার আলো জ্বালতে অসম লড়াই করেছিলেন পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। সতীদাহ প্রথা বন্ধে ও বিধবা-বিবাহ চালু করতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেই সমাজসংস্কারকের কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

আর এ যুগের বিদ্যাসাগর সমাজসংস্কারক অধ্যাপক ইমানুল হক একটি আদর্শ। যার সমাজ পরিবর্তনের কাজ সম্পর্কে জেনে এ প্রজন্ম তো বটেই এমনকি আগামী প্রজন্মও অনুপ্রাণিত হবে। অধ্যাপক ইমানুল হক একজন প্রকৃত আদর্শবান আপোষহীন শিক্ষক। তাঁর উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে “ভাষা ও চেতনা সমিতি”।

সমাজসংস্কারক ইমানুল হক তাঁর বেতনের বেশিরভাগ টাকাই খরচ করেন মানিকতলা খালপাড়ের সুবিধা-বঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। অধুনা একজন অরাজনৈতিক প্রতিবাদী যার পা কোনও দিন পিছিয়ে আসেনি, ভয়ে গলার স্বর কখনো কমে যায়নি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে লড়তে। ইমানুল হক মানিকতলা খালপাড় বস্তির ত্রাতা। খালপাড়েই “ভাষা ও চেতনার” উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালতে গড়ে তুলেছেন পাঠশালা-বইঘর-কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

মানিকতলা খালপাড়ের কোল ঘেঁষে কয়েক হাজার পরিবার কোনক্রমে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করে।তাঁরা পায়না কোনও সরকারি সাহায্য।ওই বস্তির সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাই যেন এ যুগের বিদ্যাসাগর ইমানুল হকের শিক্ষা আন্দোলনের এক একজন সৈনিক। নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের। এ জন্য কম ঝক্কি পোহাতে হয় না এ যুগের বিদ্যাসাগর ইমানুল হককে। তবুও তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নয়।

ওই সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলোকে নিয়ে আসার জন্য জীবনের অনেক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে এগিয়ে চলেছেন সাহিত্যিক ইমানুল হক। পুজো পার্বনে ওই সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতেও তৎপর হয়ে ওঠেন এ যুগের বিদ্যাসাগর।

করোনা আবহের মধ্যেও, এবারের দুর্গাপুজোয় ওদের মুখে হাসি ফোটালেন। আলোয় জ্বাললেন শিক্ষা প্রসারের। দুস্কৃতিদের ভেঙে দেওয়া পাঠশালা গড়ে তুললেন নতুন করে।

এবারের দুর্গাপুজোয় মানিকতলা খালপাড়ের বস্তিতে আলো জ্বালতে ‘ভাষা ও চেতনা পাঠশালা’র পাশে এসে দাঁড়ালেন আরেক মহীয়সী প্রতিবাদী লেখিকা শতরূপা সান্যাল, অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী,
এছাড়াও ছিলেন প্রকাশ উপাধ্যায়, তীর্থ বিশ্বাস, সোমেন দা, বলিউডের চিত্রনাট্যকার সুমিত অরোরা, রাহুল দাশগুপ্ত, আমিনিয়া’র মালিক আমিন সিদ্দিকি প্রমুখ।

“ভাষা ও চেতনা সমিতি” ফুটপাথের যে পাঠশালাটি চালায়, অধ্যাপক ইমানুল হকের নেতৃত্বে। দুশোর বেশি শিশু পড়ে সেখানে। আজ ঋতাভরী ও তার বন্ধুরা হাজির হয়েছিল ওই শিশুদের জন্য ব্যাগ, নতুন জামাকাপড়, মাস্ক এবং বিরিয়ানি নিয়ে। কম্পিউটারও ছিল তাদের জন্য! আজ যে তাদের নিজস্ব একটা কম্পিউটার শেখার ঘর ও উদ্বোধন করা হল! শিশুদের আনন্দ উত্তেজনা দেখে কে! এমন পুজো ওদের আগে তো কখনো আসেনি!
মহীয়সী লেখিকা শতরূপা সান্যাল প্রাণ ভরা ভালোবাসা ও স্নেহাশিস জানিয়েছেন সুন্দর মনগুলির প্রতি।

এই মহতি অনুষ্ঠান সফল করতে স্কাড পরিবার, সাকেত, রাহুল, সিদ্ধার্থ, আসিল ও সুমিতের অকৃত্রিম সহযোগিতায় মানিকতলা খালপাড়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অন্ধকার গলিতে এক টুকরো আলোর দিশা পাওয়া গেল।

সমাজসংস্কার ও শিক্ষা প্রসারে আগামীর নতুন ইতিহাসে আরও এক আদর্শবান মেরুদন্ডী বাঙালির নাম পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের পাশাপাশি উচ্চারিত হবে, যিনি আদর্শহীন-সুবিধাবাদী যাপনের বিপ্রতীপে সমানতালে লড়াই করে আসা এযুগের বিদ্যাসাগর সমাজসংস্কারক অধ্যাপক ইমানুল হক।।

Related posts

Leave a Comment