কার জমি চাই, মালকড়ি ফেলুন, হয়ে যাবে..

মুর্শিদাবাদের খাড়গ্রাম বি.এল.আরও অফিসে ঘুঘুর বাসা

সৌভিক ব্যানার্জীঃ ঘটনাস্থল মুর্শিদাবাদ জেলার খড়্গ্রাম বিএলআরও অফিস। মুর্শিদাবাদ জেলার খড়্গ্রাম ব্লকে কান্দি পৌরসভার বাঘডাংগা এলাকার বাসিন্দা কমলাবালা দেবী-র নামে কিছু চাষজমি রেকর্ডেড ছিলো, যিনি ১৯৯২ সালে প্রয়াত হন। মৃত্যুর পরেও চাষজমিগুলো কমলাবালা দেবীর নামেই রেকর্ডেড ছিলো, যদিও তার ছেলে চাষাবাদ করতেন। তার পরিবারে একমাত্র ছেলে প্রনবেশ ভট্টাচার্যও ২০১৯ সালে প্রয়াত হন। পুত্রবধূ সুলেখা ভট্টাচার্যও ২০১৪ সালে প্রয়াত হন। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনানুযায়ী তাদের রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তির বর্তমান মালিক প্রনবেশের সন্তান ২ মেয়ে এবং ৩ ছেলে। কিন্তু সম্প্রতি আশ্চর্যজনক ভাবে জানা যায়, মৃতা কমলাবালা দেবীর সকল সম্পত্তি দুইবোনকে ঠকিয়ে তিননাতি অমলেশ ভট্টাচার্য, অখিলেশ ভট্টাচার্য এবং সুবীর ভট্টাচার্য,সকলের বাড়ি বাগডাংগা, কান্দি, মুর্শিদাবাদ, তারা খড়্গ্রাম বিএলআরও অফিস থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে!এইকাজে প্রত্যক্ষ মদত দিয়েছেন কান্দি পৌরসভার চেয়ারম্যান, তিনি একটি মিথ্যা ওয়ারিশন সার্টিফিকেট দিয়েছেন যে প্রনবেশের তিনটি সন্তান, যদিও বাস্তবে তারা পাঁচ ভাইবোন!

এরপর ঘটনা জানিয়ে ৮ই জুন ২০২২ মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে একটা অভিযোগ দায়ের হয়। তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে থেকে কান্দি পৌরসভায় এবং সংশ্লিষ্ট খড়্গ্রাম বিএলআরও অফিসে রিপোর্ট তলব ও করা হয়। কান্দি পৌরসভা প্রনবেশের ৫ সন্তানকেই নোটিশ পাঠিয়ে বক্তব্য জানতে চান, এবং খড়্গ্রাম বিএলআরও থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের কপি আনিয়ে তদন্ত চালান, তদন্ত শেষে জানা যায়, আদৌও ওই ওয়ারিস সার্টিফিকেট কান্দি পৌরসভা কোনোদিন ইস্যুই করেনি, চিঠির মেমো নাম্বার, সই, স্ট্যাম্প সম্পূর্ণ ভুয়ো।(memo no 17/I-K-M/21 dt 03.01.2021)এখানেই উঠছে প্রশ্ন। পৌরসভা হেয়ারশিপ সার্টিফিকেট ইস্যু করেননি, অথচ সেই হেয়ারশিপ সার্টিফিকেট দিয়েই দিনেদুপুরে বিএলআরও অফিস থেকে একাধিক সম্পত্তি মিউটেশন হয়ে গেছে! (KHARGRAM BL&LRO Mutation Case no MN/2021/1214/75007, MN/2021/1214/75011, MN/2021/1214/75015)মা-মাটি-মানুষের জমানায় এও সম্ভব??

আরও মজাদার তথ্য, সবটা যখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, তারপরেও প্রশাসনের দায়সারা মনোভাব। আজ পর্যন্ত এতবড় জালিয়াতির ঘটনায় কোনো এফআইআর দায়ের হয়নি, মিউটেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের ভূমিকা নিয়ে কোনো বিভাগীয় তদন্তও হয়নি!! কান্দি পৌরসভা দায়সারা ভাবে তাদের তদন্ত শেষে পর্যবেক্ষণের জন্য নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে তে পাঠিয়েছেন, তার কপি বিএলআরও খাড়্গ্রামকেও জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়নি কেন?? চেয়ারম্যান জয়দেব ঘটক অদ্ভুত নীরব!!বিএলআরও খড়্গ্রাম এফআইআর দায়ের করেননি কেন? কাকে আড়াল করতে চাইছেন তিনি? তার অফিসেই তো সবটা ঘটেছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবেই। সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ অফিসার (RO) মিউটেশন আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করার আগে একবারও ওয়ারিশ সার্টিফিকেটটি কান্দি পৌরসভা থেকে ভেরিফিকেশন করাননি কেন? উত্তর নেই! এখনও অব্দি মিউটেশন হয়ে যাওয়া সম্পত্তিগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়াও হয়নি! অর্থাৎ, প্রশাসন জালিয়াতি হয়েছে জেনেও তা রোধ করতে ব্যর্থ!

Related posts

Leave a Comment